• আজ, বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ | ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪
logo

প্রিয় ঋতু বর্ষা

প্রিয় ঋতু বর্ষা

প্রিয় ঋতু বর্ষা

নীল নবঘনে আষাঢ়  গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে, 

ওগো আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।

যখন বর্ষা ঋতুর আগমন ঘটে ঠিক তখনই কবি সুনির্মল বসু প্রকৃতির মায়াবী রুপের ছবি একেছেন। সজল মেঘ মেদুর এর অপরুপ বর্ষার সঙ্গে রয়েছে বাঙ্গালি জাতির আজন্ম কাল হৃদয়ের বন্ধন। বর্ষাকাল শস্য - শ্যামলা আনন্দঘন নবান্ন উৎসব এর নেপথ্য মঞ্চ। বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি পায় নতুন মাত্রা। জরাজীর্ণ গ্রীষ্মক্লান্ত এ দেশের প্রকৃতিকে বর্ষা তার আপন প্রেম পেয়ালার পবিত্র জলে স্নান করিয়ে সিক্ত করে তোলে। জলরঙ্গে রাঙিয়ে দেয় ধরণী।আবার তারই অপ্রসন্ন অভিমানী দৃষ্টিতে ঘরে ঘরে অন্তহীন সংহার রূপে মানুষ আতঙ্কিত ভীতসন্ত্রস্ত।শ্যাম ঘন বরষা একদিকে যেমন গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে আশীর্বাদ, অন্যদিকে আবার দরিদ্র পল্লীবাসী অনাহারী ফুটপাতবাসীদের কাছে দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ জীবন প্রবাহের এক অপরিহার্য কল্যাণী ঋতু।


বর্ষার আগমনে গ্রীষ্মের বিবর্ণ প্রকৃতি হয়ে ওঠে কোমল আর সজীব। চারদিকে জেগে ওঠে প্রানের স্পন্দন। কবিগুরু লিখেছেন “এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়” কবির দৃষ্টিতে বর্ষা গভীর অর্থ ব্যঞ্জনাময় বিস্তৃত। বর্ষাকাল হলো অবকাশের নিষ্প্রয়োজন ঋতু। ঋতু শুধু অর্থনৈতিক জীবনে নয় সাংস্কৃতিক ভাগবত জীবনের ও বর্ষা ঋতু রয়েছে এক অনন্য ভূমিকায়। বর্ষার সরস সজল স্পর্শ শুধু রুক্ষ ধূসর প্রান্তকে অসীম কানে স্পন্দিত করে নি প্রেমিক মনকে দুর্বল করে তোলে। প্রেমিকার নিঠুর ঠোঁটের ভাজে উর্বর ভাষায় উন্মাদনার চেতনা সঞ্চারিত হয় ক্ষণে ক্ষণে। বর্ষা উৎসব আনন্দে রচিত হয়েছে কাব্য, গান, উপন্যাস ও অজস্র প্রেমের কবিতা  আলো আঁধারের খেলা অনুষ্ঠিত হয়  বিমোহিত করে প্রকৃতি রানীকে। নদী নালা খাল বিল পুকুর ডোবা কানায় কানায় ভরে ওঠে। বিলে বিলে হেলেঞ্চা, কলমি লতা, শাপলাদের সমাবেশে সেজে ওঠে প্রকৃতি কন্যা।


বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এ দেশের প্রকৃতিতে ১২ মাসে ছয়টি ঋতু রূপের পসরা সাজিয়ে আসে। বর্ষাকাল এই ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ঋতু। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে শুকনো ধরনীকে সিক্ত করে বাংলার বুকে বর্ষার শুভ আগমন ঘটে।


কবি গুরুর ভাষায়,  

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদে এলো বান।টিনের চালে রিমঝিম বৃষ্টির নৃত্যে মুখরিত হয় গ্রামবাংলা।প্রকৃতি যেন নিজের তিস্নার্ত বুক ভরানোর জন্য বর্ষাকে আহবান করে।জেলেদের মাতান উল্লাসে জাল ফেলে নদীতে ।জল ভরে উঠে আসে রুপালি মাছ। জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, কলা গাছ কেটে ভেলা বানায় ছোট্ট শিশুরা। কলার ভেলায় চড়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে শৈশব। ডুব দিয়ে হার মানায় পানকৌড়িকে। এই বর্ষা প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলে বৃষ্টির ।ফলে সতেজ হয়ে ওঠে গাছপালা। এ সময় নানা ধরনের ফুলের ফুল ও ফলের সমারোহ সেজে ওঠে প্রকৃতি রানীর প্রাণের ডালা। কদম, রজনীগন্ধা , কেয়া , জুই , গন্ধরাজ, হাসনুহানার গন্ধে প্রকৃতিকে বিমোহিত করে তোলে। আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা সহ বিভিন্ন হলে সম্মোহিত হয় প্রকৃতি।বাংলা মাস অনুযায়ী আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল।  

বর্ষাকাল বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনে অপার সম্ভাবনার বার্তা। কৃষিনির্ভর এ দেশের চাষাবাদ অনেকটাই বৃষ্টিনির্ভর। পরিমিত বৃষ্টিপাত এ দেশে প্রচুর ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অনাবৃষ্টি ও খরায় বাংলাদেশের কৃষি ভেঙে পড়ে।বর্ষাকালে একদিকে অর্থকরী ফসল পাট কৃষকের ঘরে আসে, অন্যদিকে এটি আউশ ধানের মৌসুম। এ সময় আমরা প্রচুর মাছ পেয়ে থাকি। বর্ষার সময় নৌকাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত খুব সহজ হয়।


বর্ষাকাল বাংলাদেশের আনন্দ-বেদনার এক ঋতু। এ দেশের মানুষের জীবন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে একাকার হয়ে মিশে আছে বর্ষাকাল।

এ দেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি কৃষি অনেকাংশে বর্ষার কাছে ঋণী। বর্ষাকাল রূপ-বৈচিত্র্যে তুলনাহীন মানুষের মনে সঞ্চয় করে অনন্ত বিরাজময় বেদনা। বর্ষার এক হাতে বরাভয় অন্য হাতে ধ্বংসের প্রলয় ডমরু। এক পদপাতে সৃজনের প্রাচুর্য অন্য পাতে ধ্বংসের তাণ্ডব। এক চোখে অশ্রু অন্য চোখে হাসি। বর্ষা আমাদের কাছে অতি আদরের ও অনন্ত বেদনার ঋতু রূপে পরিচিত।


ইজাজুল হক সৌমিন 

নরসিংদী সরকারি কলেজ 

হিসাববিজ্ঞান (৪র্থ বর্ষ)

ফিচার

Top